ভাষাঃ
কলমাকান্দা উপজেলার ভাষা অনেকটাই ঢাকার ভাষার মত। এমনকি এখানকার অনেক অশিক্ষিত লোকের মুখের ভাষাও দেশের অন্যান্য অংশের লোকের পক্ষে অনায়াসে বোধগম্য। এ উপজেলার মানুষের ভাষায় সিলেট অঞ্চলের ভাষার প্রভাব বিদ্যমান। এছাড়া প্রতিবেশী আসামী ভাষার প্রভাবেরও কিছু নমুনা এ উপজেলার ভাষায় পাওয়া যায়। যেমনঃ আদ্যস্বর হিসেবে ‘স’ বর্ণ ‘হ’ বর্ণরূপে উচ্চারিত ও লিখিত হয়। আসামী ভাষার উষ্ম বর্ণ আদ্যক্ষর হোক না হোক কর্কশ ‘হ’ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়। উদাহরনঃ ‘সে’ এর স্থলে ‘হ’ সকল এর স্থলে ‘হগ্গল’, ‘সম্মুখে’র স্থলে ‘হমকে’, ‘শুন্যার’ স্থলে ‘হুনা’ ইত্যাদি।
কলমাকান্দার ভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) উচ্চারণঃ অ, ও এবং উ স্বরধ্বনিসমূহের উচ্চারণ প্রায়ই অদলবদল ঘটে। যেমনঃ ছোটো>ছোট্টো>ছুডু। ‘তমার’ এবং ‘তোমার’ ‘তর’ এবং ‘তোর’ (তোমাকে অর্থে) দুটোই উচ্চারিত হয়। শব্দের মধ্যবর্তী ‘খ’ ধ্বনি কখনো কখনো ‘হ’ ধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়। যেমনঃ তখন>তহন (সে সময় অর্থে)।
(খ) বিশেষ্যঃ কর্তৃপদের অন্তে সাধারণত ‘এ’ কার হয়। যেমনঃ পুতে (ছেলে), বাপে (পিতা)। অধিকরণ কারকের অন্তে কখনো কখনো ‘অ’ উচ্চারিত হয়। যেমনঃ ক্ষেত অ (ক্ষেতে)। শিষ্ট ভাষায় অধিকরণ কারকের শেষে ‘তে’ উচ্চারিত হয় কিন্তু এ ভাষায় কখনো তা ‘ত’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমনঃ বাড়ীতে>বাড়ীত। কর্ম ও সম্প্রদান কারকে বহুবচন ‘দের’ স্থলে ‘রারে’ ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ ‘চাকরদের’ স্থলে ‘চাকরারে’।
(গ) সর্বনামঃ সর্বনামের কতকগুলো বিশেষরূপ লক্ষণীয়। যেমনঃ ‘তাকে’ অর্থে ‘তানে’ ‘তিনিরে’ কিংবা ‘তান’ ব্যবহৃত হয়।
(ঘ) ক্রিয়াঃ ভবিষ্যৎ কালের উত্তম পুরুষে ক্রিয়া পদের অন্তে আম বসে। যেমনঃ পাইবাম, খাইবাম, কইবাম ইত্যাদি। সংযোজক ক্রিয়ার অন্তে ‘য’ ফলা ‘অ্যা’ ধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয়। যেমনঃ ‘ধইর্যা’ (লিখিত রূপ) উচ্চারণের সময় ‘দইরা’ ইত্যাদি।
হাজং ভাষা পরিচিতিঃ এ উপজেলায় বসবাসরত হাজংদের ভাষাকে পূর্ব বাংলা ভাষার বিকৃত রূপ বলা যায়। হাজং উপভাষাটি তিব্বত-বার্মা ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলেও বহু আগেই তা মূল রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ ভাষা এ অঞ্চলের দালাস (প্রকৃতপক্ষে একটি গারো সম্প্রদায়), বানাইস, হাদিস, এবং ঐ একই অঞ্চলের নিম্নশ্রেণীর উপজাতীয়রা ব্যবহার করে থাকে।
সংস্কৃতিঃ
কলমাকান্দার সংস্কৃতি ও জীবনধারায় নিম্নলিখিত উপকরণগুলো বিদ্যমানঃ
(ক) সমাজ কাঠামোঃ
কলমাকান্দা উপজেলায় সমাজ ব্যবস্থা সাধারণভাবে একরকম মনে হলেও কিছুটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ ধর্মীয় পার্থক্য, উচ্চ বিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন বিত্ত। প্রতি শ্রেণীর সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য নিরূপন করা যায়।
(খ) ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক শ্রেণীঃ
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কলমাকান্দা উপজেলার জনগোষ্টিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন-মুসলিম সম্প্রদায়, হিন্দু সম্প্রদায় ও উপজাতীয় সম্প্রদায়।
মুসলিম সম্প্রদায়ঃমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শুধু সুন্নী সম্প্রদায়ের মুসলমানই কলমাকান্দা উপজেলায় বসবাস করে
হিন্দু সম্প্রদায়ঃকলমাকান্দা উপজেলায় আর্যযুগের চার শ্রেণীর হিন্দু সমাজ বর্তমানে আর নেই। এখন হিন্দু সমাজে দু’শ্রেণীর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। পুরোহিত হিসাবে পূজা অর্চনা কাজে লিপ্ত ব্রাহ্মন শ্রেণী। তারা এখনওসমাজে বর্ণশ্রেষ্ট। বাদবাকী অন্যান্য সকল হিন্দুই কৃষি, ব্যবসা, চাকুরী ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করে থাকে।
আদিবাসী/উপজাতীয় সম্প্রদায়ঃকলমাকান্দা উপজেলায় চারটি আদিবাসী/উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। যেমন- গারো, হাজং,হদি ও বানাই।
(গ) আদিবাসী সমাজ ও সংস্কৃতিঃ
গারো সম্প্রদায়ঃকলমাকান্দা উপজেলায় উপজাতিদের মধ্যে গারোরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক।গারোদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে চারটি বৈশিষ্ট্যঃ
১ .মাতৃকুলীয় বংশ পরিচয়ঃ সন্তানেরা মাতার বংশ বা গোত্রের নামধারণ করে ।
২. মাতৃসূত্রীয় উত্তরাধিকার প্রথাঃ কন্যা সন্তানরাই শুধু পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
৩. পরিবার : পরিবার ও সমাজে নারীর প্রাধান্য বেশী। পরিবার নারী শাসিত।
৪. নকনা ক্রম প্রথা : মাতা পিতা কন্যাদের মধ্যে থেকে এক জন কন্যাকে স্থাবর অস্থাবরসম্পত্তির অধিকাংশের উত্তরাধিকারী করেন। পিতা মাতাকে লালন পালনের নিমিত্তে কন্যাকে গারোভাষায় নকনা বলে। নকনার জন্য পিতা আপন ভগ্নীপুত্রকে জামাই হিসেবে নেয়। সেই জামাই কে নক্রম বলে।
ধর্মঃ গারোদের আদিধর্মের নাম “সাংসারেক ধর্ম ”। কিন্তু বর্তমানে এই ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা খুবই কম। গারোরা বর্তমানে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এখনওআদিধর্মের (সাংসারেক) ধর্মের আচার ও অনুষ্ঠান পালন হয়।
হাজং সম্প্রদায়ঃ হাজং সমাজ পিতৃতান্ত্রিক এবং পরিবার ও সমাজে পুরুষের প্রাধান্য বেশী। হাজংরা সনাতন (হিন্দু ধর্ম)ধর্মের অনুসারী। তবু হাজং সমাজে বা পরিবারে কিছু কিছু উপজাতীয় কৃষ্টি কালচার পরিলক্ষিত হয়। যেমন: হাজং মেয়েরা ‘পাতিন’ আর্গন পরিধান করে। আবার তাদের নিজস্ব ভাষা আছে। তাদের মধ্যে তালাক প্রথা আছে।
হদি সম্প্রদায়ঃ হদিরা যদিও উপজাতি তবু তারা পুরোপুরি হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়ে তাদের আদিসমাজের কৃষ্টি কালচার ভুলে হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত হয়েগেছে। হদিদেরকে এখন আর উপজাতি বলে মনে হয় না।
বানাইঃ কলমাকান্দার ক্যাবলপুরে ১২টি বানাই পরিবারের বসবাস রয়েছে। এরা হাজংদের সাংস্কৃতিক আচার আচরণ পালন করে থাকে।
(ঘ) লোক সংস্কৃতিঃ
কলমাকান্দার লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বলতম যে আলোকবর্তিকাগুলো এলাকার মানুষের প্রাণজুড়ে রয়েছে, তাদের সুখদুখের তথা নিত্যদিনের আনন্দ বেদনার সাথে জড়িয়ে আছে সে অনুষ্ঠানগুলো হলঃ
àকার্তিক বর্তঃকলমাকান্দা উপজেলার গ্রামাঞ্চলে “কার্তিক বর্ত” নামে একটি দিবস পালন করা হয়েথাকে। অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষদিন সন্ধ্যায় শিশু কিশোররা এক মোঠু পাঠশলায় আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় অথবা খোলা জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে এবং চিৎকার করে বলে “ভালা আয়ে বুড়া যায়, মশামাছির মুখ পোড়া যায়”; এটাকেই অনেকে “ভোলা দৌড়ানো” বলে থাকে। ঐদিনই সন্ধ্যায় বা বিকালে একজন কুড়াল নিয়ে ফলজ গাছের গোড়ায় কয়েকটি কোপ দেয়। অন্য আরেকজন বলতে থাকে“কাইট্টো না ভাই কাইট্টো না সামনের বছর নৌকা ভরা ফল অইবো” অর্থাৎ আগামী মৌসুমে আরওবেশী ফল হবে।
àচৈতপর্বঃ চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে । সেই দিনে মেলা বসে সকাল থেকে। এইদিনে হিন্দুদের চরক পুজা হয়। মেলা থেকে রং এনে একটি “কল্কীর মুখ ভিজিয়ে গরুর গায়ে ছাপদেয়া হয়”। এই পর্যায়টি সাধারণত হিন্দু সমাজেই বেশী হয়ে থাকে। বর্তমানে এর প্রচলন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এটাকে ‘হাদা’ বলা হয়।
àব্যাঙের বিয়েঃ ফাল্গুন চৈত্র মাসে যদি অনাবৃষ্টি বা প্রচন্ড খড়া দেখা দেয়। তখন গ্রামাঞ্চলের লোকেরা বৃষ্টির আশায় “ব্যাঙের বিয়ে” দিয়ে থাকে। একটি ছোট পুকুর আকৃতি করে এতে পানি দিয়ে ভরেরাখে। সেখানে একটি কলাগাছ রোপন করে এর নীচে দু’ট ব্যাঙ এনে ছেড়ে দেয়। এটাকে ব্যাঙের বিয়ে বলে। উক্ত অনুষ্ঠানে জন্য রাতে যুবকেরা পাড়ার সকল বাড়ীতেই চাউল সংগ্রহের জন্য যায় এবং’আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, রাসুল আল্লাহ মেঘ দে’ গানটি গেয়ে গেয়ে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে।
àপৌষ সংক্রান্তিঃপৌষ মাসের শেষ দিনে প্রতিটি পরিবারে হরেক রকম পিঠা তৈরি করে প্রতিবেশীদেরকে দাওয়াত করেখাওয়ানো হয়। যে পরিবারে যত প্রকার পিঠা তৈরী করতে পারবে সেই পরিবার তত বেশী গর্ববোধ করে থাকে। এ উৎসব হিন্দু পরিবারগুলোতেই বেশী হয়ে থাকে।
àআড়ং (ষাড়ের লড়াই) ও মেলাঃকলমাকান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর, চেংনী, কলমাকান্দা, বিশরপাশা এ সকল অঞ্চলে সাধারণত শীত ওবসন্তকালে মেলা বসে। ঐ মেলা উপলক্ষ্যে ষাড়ের লড়াই হয়ে থাকে।
(ঙ) লোক সাহিত্যঃ
লোক সঙ্গীত ও লোক গাঁথা কলমাকান্দা উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখনও আছে। পুঁথি পড়ার আসর বসেবর্ষার দিনে অথবা রাতে শোবার আগে। অবসর যাপনের জন্য বাড়ীতে পুথিঁ পড়ার রেওয়াজ দেখাযায়। কবি গান আর ঘাটু গানের প্রথার অতীতে খুব প্রচলন ছিল। বর্তমানে এ গানের প্রায় বিলুপ্তি ঘটেছে। তবে বাউল গান জারিগান, গাইনেরগীত, মেয়েলীগীত ও গ্রাম্যশিলুক এখনও গ্রামে গ্রামে দেখতে পাওয়া যায়। লোক গাঁথার প্রচলন ও যথেষ্ট আছে।
(চ) লোকযানঃ
অতীতে শুকনা মৌসুমে গরুরগাড়ী ও মহিষের গাড়ীর প্রচলন ছিল। বর্তমানে এর প্রচলন হ্রাস পেয়েছে।এ সকল গরুরগাড়ীর স্থানে রিক্সা, ভ্যানগাড়ী ও টেম্পুর প্রচলন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। পালকীর প্রচলন ও পূর্বের তুলনায় অনেক হ্রাস পেয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে বিয়ে শাদীতে এখনও এর ব্যবহার রয়েছে।নদীপথে নৌকা বা গয়নার প্রচলন এখনও আছে। তবে এখন আর পূর্বের মতো দাঁড়টানা, পালেরব্যবহার, গুনটানা হয়না। এখন অধিকাংশ নৌকাই ইঞ্জিনে চলে।
(ছ) লোক ধর্মঃ
খোদাই শীন্নি ‘হেমন্ত’ ঋতুর শুরুতেই গ্রামের কয়েকজন মিলে প্রতিটি বাড়ী থেকে চাউল সংগ্রহ করে মাঠের চাউল ও গুড় দিয়ে একটি শির্ণী করে। দোয়া দুরুদ পড়া হয় । এতে সকলের বিশ্বাস এগ্রামের আর কোন রোগ বালাই হবে না।
(জ) সঙ্গীত ও নৃত্যঃ
গারো ও হাজং উপজাতিরা সংগীত ও নৃত্যে অত্যন্ত পারদর্শী। তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও নৃত্য ও গানের প্রচলন রয়েছে যথেষ্ট। উপজাতিরা ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে অথবা বিভিন্ন ক্লাব ও সমিতির মাধ্যমেসঙ্গীত ও নৃত্য চর্চা করে থাকে। কলমাকান্দার হিন্দু সমাজেও নৃত্য ও সঙ্গীতে মোটামুটি ভাবেপারদর্শী। তারাও সঙ্গীত ও নৃত্যে অত্যন্ত আগ্রহী। হিন্দুদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে গানের ব্যবহার হয়ে থাকে।মুসলিম সমাজের অনেকেই সঙ্গীত প্রিয়। অনেক মুসলিম ছেলে মেয়ে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গান নৃত্য রপ্ত করে থাকে।
(ঝ) নাট্যকলাঃ
পূর্বে অত্র উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নাটকের চর্চা লক্ষ্য করা যেতো। গ্রামাঞ্চলে যাত্রার খুবই কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি, সিনেমাহল, টিভি, ভিসিডি, ডিভিডি, ডিশ এন্টনা, ক্যাবল সংযোগ ইত্যাদির প্রভাবে এগুলোর (নাটক ও যাত্রা) চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এক সময় কলমাকান্দার বিভিন্ন গ্রামে যাত্রা গানের দল, কিচ্ছার দল, জারি গানের দল ছিল।
(ঞ) মেয়েলী গীতঃ
অত্র উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এখনও বাড়ীতে বাড়ীতে মেয়েদের গীতের প্রচলন পরিলক্ষিত হয়।বিয়ে-শাদী উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে চলে মেয়েলী গীত।
(ট) খেলাধুলাঃ
àগ্রাম্য খেলাঃ এ অঞ্চলের মেয়েরা সাধারণত এক্কা- দুক্কা, থাপড়ি, তালুক, মোগল পাঠান, ষোলকডি,পুতুল বিয়ে ইত্যাদি খেলা খেলে থাকে। ছেলেদের খেলাধুলার মধ্যে হাডুডু, দারিয়াবান্দা, গোল্লাছুট, বউছি,গুডিবাড়ী ইত্যাদি ।
àনৌকা বাইচঃনৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা পূর্বে অতি জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তবুবিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও গ্রামের লোকেরা নিজেদের উদ্যোগে নৌকা বাইচপ্রতিযোগিতা। বর্ষা ঋতুতে মাছ ধরা আর নৌকা বাইচ গ্রাম্য যুবকদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ।
(ঠ) সনাতনী কারীগর শ্রেণীঃ
সনাতন কারিগরদের মধ্যে সুতারদের কাজের চাহিদা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে আরও বেড়েছে। আগে বাড়ী ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হতো। এখন আর বাড়ী বাড়ী যেতে হয়না বললেই চলে। এর কারণ প্রতিটি গ্রামে- গঞ্জে আসবাবপত্রের দোকান রয়েছে। দোকানে বসেই সুতাররা কাজ করে।
কামারের চাহিদা পূর্বের মতই রয়েছে। তবে দিনেদিনে লোকজন বাড়ছে সাথে সাথে সকল লোহারজিনিষের চাহিদাও বাড়ছে। বলতে গেলে এ অঞ্চলের প্রতিটি বাজারেই কামারের দোকান রয়েছে।
কুমারের চাহিদা বর্তমানে অনেক হ্রাস পেয়েছে। সনাতন কারিগর শ্রেণীর মধ্যে মাটির তৈজষপত্রেরচাহিদা সবচেয়ে কম । এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজষপত্রের টেকসই বেশী হওয়াতে এ শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কুমার পরিবারের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে অন্যান্য পেশায় চলে যাচ্ছে।
(ণ) সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিঃ
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা প্রধান।হিন্দু সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দূর্গাপুজা । এছাড়াও মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় শ্রী কৃষ্ণের লীলা কীর্তন হয়ে থাকে। কীর্তনগুলো অষ্ট প্রহর থেকে ৫৬ প্রহর ব্যাপী হয়ে থাকে।
(প) খাদ্যাভ্যাস :
গতানুগতিক ভাবে সকলেই ভাত খায়।
àপিঠা সংস্কৃতিঃহরেক রকমের পিঠা তৈরির প্রচলন রয়েছে। তম্মধ্য শীতে পুলিপিঠা, ভাদ্রমাসে তালের পিঠার। তাছাড়া পৌষা সংক্রান্তিতে হিন্দু সমাজে পিঠা তৈরির অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ দিনে কোন পরিবারে কত প্রকার পিঠা তৈরি করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা হয় ।
àস্থানীয় বিশেষ খাবারঃ খীচুরী, চাশনী, বগনী, জাও ইত্যাদি। খিচুরী সাধারণত ডাল ও চাল একত্রে দিয়ে রান্না করা হয়। চাশনী শুধু পানির মধ্যে গুড় ও হালকা কিছু চাউলের গুড়া দিয়ে রান্না করতে হয়।আতপ চাল অথবা চারা গজানো ধানের চাল দিয়ে ভাত রান্না করে আড়াই দিন চাপা দিয়ে রেখে দিতে হয়। সে অবস্থায় ভাত থেকে সে পানি বের হয়, তাকেই বগনী বলে।
(ফ) বিবাহ উৎসবঃ
বিবাহ উৎসবে প্রথমে বিভিন্ন প্রকার পিঠা দিয়ে নাস্তা দেয়া হতো। এর মধ্যে পাক্কান পিঠা (নক্সীপিঠা) জালিয়া পাপড়া, পোয়া পিঠা উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে চিড়া, দুধ কলা ও বাতাশা দিয়ে নাস্তা দেয়া হতো। বর্তমানে এ ধরনের প্রচলন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে শরবতের প্রচলন এখনওরয়েছে।
হিন্দু সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে এখনও মাছের প্রাধান্য রয়েছে। তাদের বিয়েতে খাওয়ার শেষে টক দেয়ার প্রচলন আছে।
উপজাতী সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে শুকরের মাংস ও মদের প্রাধান্য বেশী।
সূত্রঃ ১। বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার (বৃহত্তর ময়মনসিংহ)
২। আলী আহম্মদ আইয়োব (নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস)
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস