আমাদের স্বাধীনতার ঊষালগ্নেই কলমাকান্দার জনগণ মুক্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। কলমাকান্দার থানার সীমান্ত ক্যাম্প পাঁচগাঁও, বড়ুয়াকোণা, খারনৈ, লেংগুরা ইপিআর সদস্যগণ উর্দুভাষী সদস্যদেরকে নিরস্ত্র করে ৩রা এপ্রিল প্রতিরোধ যুদ্ধে কলমাকান্দা থেকে মধুপুরের উদ্দেশ্যে চলে যায়। কলমাকান্দার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে প্রথমেই আলোচনায় আসবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক নাজিরপুরর যুদ্ধ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর হয় বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দা পাক সেনাদের ক্যাম্পে রসদ যাবে ২৬ জুলাই সকাল ৮টার দিকে। এ সংবাদে বি,এস,এফ ক্যাম্পের অধিনায়ক বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন। পরিকল্পনা হয় দুর্গাপুর-কলমাকান্দা নদীপথের নাজিরপুর বাজারের কাছেই পাকহানাদের আক্রমণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা নাজিরপুর পৌছে যায় ২৫ জুলাই সন্ধ্যায়। ৩টি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সবকটি প্রবেশ পথ আগলে এ্যাম্বুস করে মুক্তিযোদ্ধারা। অপেক্ষায় ছিল কখন আসবে পাকহানাদাররা। ২৬ জুলাই সকাল ৯টা অতিক্রান্ত হলো পাকহানাদের হদিস নেই। মুক্তিযোদ্ধারা একে একেই তাদের প্রত্যাহার ক্যাম্পের পথে যাত্রা করে। পথিমধ্যে নাজিরপুর কাছারির কাছে তেরাস্তায় হানাদার বাহিনীর মুখোমুখী অবস্থান। গুলি, পাল্টা-গুলি উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান পরিবর্তন ও অর্তকিত যুদ্ধে তারা অনেকাংশে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। এরপরেও তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। পাকহানাদাররা এক পর্যায়ে ক্রলিং করে সন্তর্পণে মুক্তিযোদ্ধাদের ডিফেন্স এলাকায় ঢুকে পড়ে।
দুপুর দিকে পাকবাহিনী মুক্তিবাহিনীর এল,এম,জি পজিসন নির্দিষ্ট করে জামাল এর অবস্থানের উপর ফায়ার শুরু করে। পাকহানাদারদের গুলিতে ঘটনাস্থলে জামাল উদ্দিন শহীদ হন। বিকেলদিকে পাকবাহিনীর আক্রমন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। গুলির আঘাতে কমান্ডার নজমুল হক তারার কন্ঠনালী ছিড়ে যায়। এতে যুদ্ধের গতি পাল্টে যায়। পাক হানাদারা সশস্ত্র অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দি করে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। বিক্ষিপ্ত ভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে অন্যরা আত্নরক্ষা করে ক্যাম্পে ফিরে আসে।
সে যুদ্ধে শহীদ হয়ে ছিলেন জামাল উদ্দিন, ডা. আব্দুল আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মামুদ, ভবতোষচন্দ্র দাস, নূরুজ্জামান, দ্বীজেন্দ্রচন্দ্র বিশ্বাস, ও জনৈক কিশোর কালা মিয়া। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় লেঙ্গুড়ার ফুলবাড়ী নামক স্থানে ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে ১১৭২ নম্বর পিলারের কাছে তাদের সমাহিত ও দাহ করা হয়। প্রতিবছর নেত্রকোণা জেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে ২৬ জুলাই কলমাকান্দায় শহীদ হওয়া এ বীর সেনানীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মাজার জেয়ারত, আলোচনাসভাসহ ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS